প্রত্যয় ঢাকা ডেস্ক:২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ রাজধানীর মিরপুর-১ এর ঢাকা কমার্স কলেজ সংলগ্ন চিড়িয়াখানা রোড ও ঢাকা কমার্স কলেজ রোড এর সংযোগস্থল রাইনখোলা মোড়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা গোলচত্ত্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠক ও ঢাকা কমার্স কলেজ এর সহযোগী অধ্যাপক এস এম আলী আজম।
১ ডিসেম্বর ২০১৯ মো. দুলাল মিয়া নামে এক ব্যক্তি রাইনখোলা মোড়ে নিজে অস্থায়ীভাবে ট্রাফিক কার্যক্রম শুরু করেন। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে তিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজট নিয়ন্ত্রণ করেন। চৌমাথা মোড়ে দায়িত্ব পালনের জন্য পুরানো ছাতা, ভাংগা চেয়ার আর ফুলদানী দিয়ে গড়ে তোলেন অস্থায়ী ট্রাফিক চত্ত্বর। এবার তিনি স্বউদ্যোগে ইট-পাথর দিয়ে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা গোলচত্ত্বর। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় তার এই ব্রতিক্রমী স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে সন্তুষ্ট এলাকাবাসী ও পথচারীরা।
মো. দুলাল মিয়া একজন দরিদ্র লোক। স্বেচ্ছায় বিনা পারিশ্রমিকে নিয়েছেন মিরপুরের রাইনখোলা মোড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার গুরু দায়িত্ব। যেখানে অনেক বিত্তবান গাড়িমালিক ও শিক্ষিত লোকেরা ট্রাফিক আইন মানেন না এবং সড়কে কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি করছেন। সেখানে একজন দরিদ্র অশিক্ষিত সাধারণ লোক দুলাল মিয়া নিজ উদ্যোগে নিয়মিত করে যাচ্ছেন সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ ও সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা।
বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গোলচত্ত্বরটির প্রতিষ্ঠাতা মো. দুলাল মিয়া ও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এস এম আলী আজম। দােয়া পরিচালনা করেন মাওলানা আব্দুল মোমিন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা গোলচত্ত্বর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা কমার্স কলেজ সমাজকল্যাণ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রত্যয় বিশ্বাস ও নির্বাহী সদস্য মো. মুবিন, ঢাকা কমার্স কলেজ রোটার্যাক্ট ক্লাবের সদ্য প্রাক্তন সভাপতি মো. নাবির হোসেন ও নির্বাচিত সভাপতি (২০২০-২১) শেখ আহসানুর রহমান জীম, ঢাকা কমার্স কলেজ নৃত্য ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফাহিম রায়হান ও সদস্য সাদিয়া সুলতান, ঢাকা কমার্স কলেজ রিডার্স এন্ড রাইটার্স ক্লাবের সহসভাপতি ফাতেমা জান্নাত, ঢাকা কমার্স কলেজ ন্যাচার স্টাডি ক্লাবের নির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান, ঢাকা কমার্স কলেজ বিএনসিসি’র সিইউও ফজলুল করিম আদনান, সার্জেন্ট মোমিন সরকার, ক্যাডেট ইশতিয়াক মাশরুর ও আরিফ আরমান, ৯৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম হাওলাদার, ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য মো. হানিফ ও মো.জনি চৌধুরী প্রমুখ।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা গোলচত্ত্বরের প্রতিষ্ঠাতা মো. দুলাল মিয়া কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বয়স ৩২।স্বল্পবেতনে চাকরি করতেন। থাকেন মিরপুরে। লক্ষ্য করেন প্রত্যহ রাইনখোলা মোড়ে হঠাৎ যানজটের সৃষ্টি হয়। পাশের বিশালশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা কমার্স কলেজ, বিইউবিটি, বিসিআইসি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ও অফিসগামী লোকেরা অকস্মাৎ জ্যামে পড়ে যায়।
ট্রাফিক কর্মী না থাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। কর্মস্থলে না গিয়ে একদিন নিজেই তাৎক্ষণিক ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেন। দেখলেন তার সামান্য কষ্টে অনেকেরই উপকার হচ্ছে। জ্যাম কেটে গেলে সবার মুখে আনন্দ। সবাই ভালো বলছে। সেই ভালো লাগা থেকে চাকরি ছেড়ে শুরু করে দেন স্বেচ্ছায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব। দুলাল মিয়া বলেন, আমার চাহিদা কম। মানুষের সেবায় অনেক আনন্দ লাগে। এলাকাবাসী আমার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে যা দেয় বাঁচার জন্য তাই যথেষ্ট। তিনি বলেন, আমি মুর্খ মানুষ, রাজনীতি বুঝি না, কিন্তু আমি বঙ্গবন্ধু পাগল। বঙ্গবন্ধু ছিলেন খাঁটি জনসেবক। শেখ ফজিলাতুন্নেছা ছিলেন আদর্শ মা। বঙ্গমাতাকে ভালোবাসী। তাই তার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ আমি প্রতিষ্ঠা
করেছি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা গোলচত্ত্বর।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা গোলচত্ত্বরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা কমার্স কলেজ রোটার্যাক্ট ক্লাব ও সমাজকল্যাণ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা মডারেটর এবং বাংলাদেশ সামাজিক সাংস্কৃতিক সংসদ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম আলী আজম বলেন, জনগণকেই জননিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে বিশাল জনগোষ্ঠীর সার্বিক নিরাপত্তা বিধান কঠিন। মো. দুলাল মিয়া সড়ক ও
জননিরাপত্তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। দুলাল মিয়া একজন প্রকৃত সমাজকর্মী। তার থেকে শিক্ষণীয় আছে। অধ্যাপক আলী আজম বলেন, আমরা নিরাপদ সড়ক চাই। আর কোনো মায়ের সন্তান যেনো সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ না হারায় সেজন্য জনগণকে ট্রাফিক সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, আমি ঢাকা কমার্স কলেজ রোটার্যাক্ট ক্লাব ও ন্যাচার স্টাডি ক্লাবের পক্ষ থেকে চিড়িয়াখানা রোড ও ঢাকা কমার্স কলেজ রোডে কয়েকবার বৃক্ষরোপণ করেছি। দুলাল মিয়া প্রত্যহ পানি দিয়ে পাহারা দিয়ে বেড়া দিয়ে সেই গাছগুলোকে বড়ো করেছ। তিনি দুলাল মিয়ার এরূপ কর্মকাণ্ডকে সাধুবাদ জানান এবং সবাইকে এভাবে সামাজিক কর্মকাণ্ডে এগিয়ে আসার আহবান করেন। উল্লেখ্য, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা
গোলচত্ত্বরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা ইউনিভার্সিটি সাইক্লিংক্লাবের তৎকালীন সভাপতি এস এম আলী আজম ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ শ্লোগান নিয়ে ২৪ আগস্ট ১৯৯৪ দুর্ঘটনার সড়ক ঢাকা-আরিচা সাইক্লিং করেন।
রিপোর্ট:প্রত্যয় বিশ্বাস,মিরপুর,ঢাকা।